উন্নত দেশসমূহে নন-স্কিলড জব সিকারদের প্রস্তুতি: অর্থনৈতিক, শারীরিক, শিক্ষাগত ও মানসিক দিক
উন্নত দেশগুলোতে নন-স্কিলড বা অদক্ষ কর্মীর চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে কৃষি, নির্মাণ, ক্লিনিং, হসপিটালিটি, ওয়্যারহাউস বা কেয়ারগিভিংয়ের মতো সেক্টরে নিয়মিত শ্রমিক প্রয়োজন হয়। তবে শুধুমাত্র “কাজ করতে চাই” ভাবনা থেকেই বিদেশে গিয়ে সফল হওয়া যায় না। একজন নন-স্কিলড জব সিকারকেও চারটি দিক থেকে ভালোভাবে প্রস্তুত হতে হয় — অর্থনৈতিক, শারীরিক, শিক্ষাগত এবং মানসিকভাবে।
১. অর্থনৈতিক প্রস্তুতি (Economic Preparation)
নন-স্কিলড কাজের ক্ষেত্রেও বিদেশে যেতে প্রথম দিকে কিছু খরচ থাকে — ভিসা, টিকিট, মেডিকেল পরীক্ষা, ডকুমেন্ট প্রসেসিং এবং প্রাথমিক থাকার ব্যয়। তাই অন্তত ৩-৬ মাসের খরচ নিজের কাছে সংরক্ষণ করা উচিত। অনেক সময় কাজ শুরু করেও প্রথম বেতন পেতে কিছুটা সময় লাগে।
অর্থনৈতিকভাবে প্রস্তুত থাকলে নতুন দেশে গিয়ে মানসিক চাপ কম হয় এবং কাজের প্রতি মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হয়।
২. শারীরিক প্রস্তুতি (Physical Preparation)
নন-স্কিলড কাজের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শারীরিক পরিশ্রম লাগে। যেমন— নির্মাণকাজ, ফ্যাক্টরি, কৃষি বা ক্লিনিং সেক্টরে দীর্ঘ সময় কাজ করতে হয়। তাই বিদেশে যাওয়ার আগে শারীরিক ফিটনেস বাড়ানো খুব জরুরি।
নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অভ্যাস করুন। স্বাস্থ্য পরীক্ষা বা ফিটনেস সার্টিফিকেট নেওয়াও প্রয়োজন, কারণ উন্নত দেশগুলো সাধারণত মেডিকেল ক্লিয়ারেন্স ছাড়া কর্মী গ্রহণ করে না।
৩. শিক্ষাগত প্রস্তুতি (Educational Preparation)
নন-স্কিলড কাজের জন্য উচ্চ ডিগ্রির প্রয়োজন না থাকলেও প্রাথমিক শিক্ষা ও মৌলিক ভাষা জ্ঞান থাকা দরকার। ইংরেজি ভাষায় সাধারণ যোগাযোগের দক্ষতা (যেমন কথা বলা, নির্দেশ বুঝে কাজ করা) একজন কর্মীকে দ্রুত মানিয়ে নিতে সাহায্য করে।
এছাড়া যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সহজ ধারণা, নিরাপত্তা নিয়ম মেনে চলার জ্ঞান এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখার অভ্যাসও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দক্ষতাগুলো অল্প সময়েই একজন সাধারণ কর্মীকে নির্ভরযোগ্য ও উন্নত কর্মীতে পরিণত করে।
৪. মানসিক ও মনস্তাত্ত্বিক প্রস্তুতি (Psychological Preparation)
উন্নত দেশে গিয়ে কাজ করা মানে পরিবার, ভাষা ও সংস্কৃতি থেকে দূরে নতুন জীবনের শুরু। শুরুতে একাকীত্ব, মানসিক চাপ বা হতাশা আসতে পারে। তাই একজন নন-স্কিলড জব সিকারকে সবচেয়ে বেশি দরকার ধৈর্য (Patience) ও মানসিক স্থিতি।
কাজের জায়গায় শৃঙ্খলা মেনে চলা, সময়মতো কাজ সম্পন্ন করা, টিমের সঙ্গে মিল রেখে চলা—এসবের জন্য ধৈর্যশীল হওয়া অপরিহার্য। প্রথমদিকে কষ্টকর মনে হলেও ধৈর্য ধরে শেখা ও মানিয়ে নেওয়ার মানসিকতা থাকলে সফলতা নিশ্চিত।
নন-স্কিলড জব মানে অদক্ষ নয়—বরং পরিশ্রমী, ধৈর্যশীল ও বাস্তব দক্ষ মানুষদের সুযোগ। উন্নত দেশগুলোতে একজন সফল শ্রমিক হতে হলে অর্থনৈতিক স্থিতি, শারীরিক সক্ষমতা, প্রাথমিক শিক্ষা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধৈর্যশীল মানসিকতা থাকা জরুরি।
ধৈর্য, অধ্যবসায় ও ইতিবাচক মনোভাবই একজন নন-স্কিলড জব সিকারকে বিদেশের মাটিতে সফল ও সম্মানিত করে তোলে।



